পাপ
——-অরন্য হাসান দেলোয়ার
আমার পরিবার ধার্মিক। ধর্মের অনুশাসন মেনে চলার বিষয়ে বাবা মা খুবই কঠোর।আমরা তিন ভাই বোন।আমার বড় ভাই প্রফেসর।আমার বোনের বিয়ে হয়েছে একজন আলেমের সাথে।
আমি মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি।
আমার বাবা সরকারি চাকরি করেন।মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব।পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি মানুষ আমার বাবা।আমাদের পরিবারের সবাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি।
ঢাকায় আমাদের বেশ কয়েকটি বাড়ি রয়েছে।গ্রামেও অনেক সম্পদ আছে আমাদের।বেশ কয়েকবছর আগে বাবা আমাদের গ্রামে মসজিদ নির্মাণ করেছেন।একটি মাদ্রাসাও প্রতিষ্ঠা করেছেন।ইসলামী অনুশাসনের মধ্যে বড় হয়েছি।বাবা,বড় ভাই,আমার আলেম দুলাভাই যা বলতেন তা একবাক্যে মেনে নিতাম।
মাদ্রাসার শিক্ষকগণ ছিলো আমার আদর্শ।খুব ভালোই দিনগুলো কেটে যাচ্ছিলো।
একদিন বাবাকে দুদকের লোকজন ধরে নিয়ে গেলো।ভীষণ কষ্ট পেলাম।আমার আলেম দুলাভাই বাবার পক্ষে জনমত তৈরি করলেন।গ্রামের লোকজনও ক্ষেপে উঠলো।আমার বাবাকে সবাই শ্রদ্ধা করতেন।সবাই খুব ভালো পরহেজগার মানুষ হিসাবেই চিনতেন জানতেন।
চারদিকে প্রতিবাদের ঢেউ আঁছড়ে পড়তে লাগলো।আমার বাবার প্রতিষ্ঠা করা মাদ্রাসার ছাত্ররা রাস্তায় নেমে আসলেন।পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হলো। বেশ কয়েকজন আহত হলেন দু’পক্ষে।
আমি কিছু বুঝে উঠতে পারলাম না।বাবাকে জেলে পাঠানো হলো।বাবার নামে মামলা হলো অবৈধ অর্থ উপার্জনের।ধীরে ধীরে তদন্তে বেড়িয়ে এলো আমাদের সকল সম্পত্তি বাবার ঘুষ আর দুর্নীতির টাকায় অর্জিত।গ্রামের মসজিদ,মাদ্রাসা সব বাবার অবৈধ টাকায় করা।
আমার দাদা সামান্য একজন কৃষক ছিলেন।তার ভিটে বাড়ি ছাড়া আর কিছুই ছিলো না।অনেক কষ্ট করে লজিং থেকে আমার বাবা পড়াশোনা করেছিলেন।
এইসব কিছু জানার পর আমি ক্রমশ বদলে যেতে থাকি।পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আমার জীবন থেকে হারিয়ে যায়।আমি হয়ে যাই ভীন্ন জগতের এক বাসিন্দা।যে বন্ধুদের সাথে আড্ডা,চা সিগারেট আর মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকে সারাক্ষণ। এতদিন যা শিখলাম, জানলাম এক নিমিষেই সব শেষ হয়ে গেলো।
বাবার হারাম আয়ের খাদ্যদ্রব্যে বেড়ে উঠেছে আমার এই শরীর।আমার শরীরকে ঘৃণা করতে শুরু করলাম।ইচ্ছে করছিলো সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেই।
আমার প্রফেসর ভাই মাকে নিয়ে চলে গেলেন গ্রামে।আলেম দুলাভাই এখন প্রতিদিন আমার বোনকে গালাগালি করেন।অত্যাচার করেন।নতুন আর একটি বিয়ে করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আমি মেসের জীবন বেছে নিয়েছি।প্রাইভেট পড়িয়ে যা পাই তা দিয়ে চলে যায় আমার জীবন।
বাবার কথা,পরিবারের কথা ভুলে গিয়েছি।মাঝে মাঝে বোনের খবর পাই।বাবার অপরাধে আলেম দুলাভাই বোনকে খুব অত্যাচার করে।
একদিন খবর এলো আমার বোন আত্মহত্যা করেছে।
স্বত্ব সংরক্ষিত।
গেন্ডারিয়া ঢাকা।
২৮/৫/২০২০.